
প্রকাশিত: Sun, Dec 18, 2022 4:34 AM আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 8:50 PM
বিশ^কাপ উপভোগ করুন, উন্মত্ত হবেন না
নাদেরা সুলতানা নদী
[২] এই বিশ্বকাপে খুব কাছ থেকে দেখলাম, বাংলাদেশের কিছু ফুটবল দর্শক বিস্ময়কর রকমের ‘স্পোর্টিং’ এই ধরেন একদম শুরুর দিকে তারা ভীষণ ধর্মপ্রাণ হয়ে সৌদি সমর্থক হিসেবে নিজেদের তুলে নিয়ে এলেন কোমর বেন্ধে, গলা ফুলিয়ে, তারপর মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, ক্রোশিয়া এবং...! সর্বশেষ কেউ কেউ বলছেন, তারা মায়ের পেট থেকে নেমেই আসলে ফ্রান্স ফুটবলের একনিষ্ঠ ভক্ত। আমি বিশ্বাস করছি, কারণ এই সব প্রতিভা আমাদেরই আছে। এমন ট্যালেন্ট ঘরে ঘরে লুকায়িত।
আমাদের মতো এমন খ্যালা প্রিয় (!) কঠিন সমর্থক, আহা এমনটি আর কোথাও পাবে না এই বিশ্ব। তবে সমস্যা একটাই, এবার ভালোবেসে কেউ কেউ যাকেই ভরসা করছে সেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে এই বিশ্বকাপের ফুটবল মঞ্চ থেকে। ফেসবুকে ঢুকেই দেখি, এক ফুটবল বোদ্ধা বলছেন, ফ্রান্সের সঙ্গে যে দল ফাইনাল খেলবে সে নাকি স্রেফ উড়ে যাবে শূন্যে, পাবে না পাত্তা কোনোভাবেই! মনটা খারাপ হলো, না না প্রিয় দলের ভাবনায় নয়, আমার গলাটা কাশিতে ভাঙা নয়তো ভাবছিলাম তার জন্যে কবি জসীম উদ্দীনের ভাষায় আবৃত্তি করে পোস্ট দেবো, ‘যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি। শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি’। যাই হোক, এই সব ফ্রি বিনোদন তো আর পাবো না। তাই সকলকেই বলছি, হোক মজা, হোক কলরব আর তো দুইটা দিন।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: যাদের ওভাবে নেবার মতো দম নেই, মনের জোর নেই তারা ভুলেও এমন পল্টি খাওয়া দর্শকদের ধারে কাছে যাবেন না যেন। মনের দুঃখ, হতাশা, না পাওয়াকে চাপা দিতে, ভুলে যেতে সময় দিন তাদের। একটু সময় লাগবেই। আঘাত যত গভীর, তাদের প্রকাশ হবে তত দৈন্য এটাই এই সময়ের বিজ্ঞান
[৩] এটা ঠিক, ফুটবল নিয়ে প্রচণ্ড মেতে থাকা সময় প্রায় শেষ হলো বলে। আর দুই থেকে তিন সপ্তাহ। এরপর মাঝে মাঝে সারা বছরই যারা ফুটবল ফলো করেন বা ক্লাব ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন তাঁরা তাঁরাই কথা বলবেন। আমাদের মতন আমজনতা- না ওভাবে তো নয়ই, এমনকি এই বিশ্বকাপে নিজের প্রিয় দলে কে বা কারা খেলেছে, তাঁদের সবারও খোঁজ রাখবেন না। জ্বী এটা আমি কোনো গবেষণা ছাড়াই বলে দিতে পারি। তবে যা বলতে এই লেখার অবতারণা, বলে ফেলি (নয়তো প্রসঙ্গও বদলে যাবে বা কাল ভুলেও যেতে পারি এবং এই পোস্টটা কারো মনের কথা হলে প্লিজ শেয়ার) না আমি অন্য অনেক সমর্থকদের মতো বলবোনা আমি ভীষণ ফুটবল বুঝি, অত্যন্ত মেধাবী এবং উচ্চ মার্গীয় হুম্রা চুম্রা কেউ। তবে যা বলবো, খুবই স্পোর্টিং এবং সেন্সেবল একজন ফুটবল বা খেলা প্রেমী মানুষ আমি। (যাদের সন্দেহ আছে তাঁরা আমার কাছের বন্ধু বা পরিজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন সার্টিফিকেট দেখার জন্যে)। আর এই রকম একজন সমর্থক হয়ে মাত্র ৩টা টিপস দেবো আজ। প্রথম, আপনি অ, ই বা ঈ যে দলেরই সমর্থক হোন, নিজের দলকে ভালোবেসে, তার প্রেমে মাতাল হয়ে, তাঁকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে অনেক রকম তথ্য, খবরাখবর, ইতিহাসকে শেয়ার করুন। অন্যদের মুগ্ধ করেন এতে আর যাই হোক আপনার আনন্দই বাড়বে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বকাপের মাসে মজা করেন, নিজের প্রিয় দল বা আপনার পরিবার, পরিজন বন্ধুর প্রিয় দলের মাঝের পরিসংখ্যান বা অন্য সব মজার বিষয়াদি নিয়ে। তবে মজায় যেন থাকে আপনার মজা করার লেভেলের একটা পরিচয়, বন্ধুর সাথে মজা করতে নিজেদের অন্যদের সামনে মজার পাত্র করে ফেলবেন না। বিশ্বকাপ তো এক মাসের, আপনার সেন্স অব হিউমারের দৈন্য দশা যদি পুরোটাই প্রকাশিত হয়ে যায় তা কিন্তু আর বাকি ১১ মাসেও ঘুচাতে পারবেন না। মনে রাখবেন, একটা বেফাঁস পোস্ট হতে পারে সারা জীবনের জন্যে আপনার চরিত্রে লেগে যাওয়া তকমা।
তৃতীয়ত, যা না বললেই নয়, আপনি দেখবেন বাংলাদেশেই শুধু বিশেষ করে বড় দুটো দল, সবাই জানেন, নাম না বলি, একটাকে সাপোর্ট করতে গিয়ে কেউ কেউ অন্যটাকে নীচে নামানোর মিশন নিয়ে থাকেন এই পুরো মাসে। বিষয়টাতে যখন মজা থাকে, আমরা সেটা সবাই কম আর বেশি উপভোগ করি। কিন্তু কেউ কেউ বুঝে বা অন্ধ হয়ে, হাঁটু কাদা ময়লা জলে নেমে বিপরীত পক্ষকে নানান উস্কানি দিয়ে সেখানে নিয়ে নামাবেন। তারপর লাগাও কাদা নিজের গায়ে, মাখাও তা অন্যের গায়ে ইচ্ছে মতন। যে বা যারা এমনটিতে অভ্যস্ত তাদের সেটা করতে দিন। কিন্তু আপনি যদি সেন্সেবল মানুষ হউন তাহলে সাবধান। নিজের দল হেরে গেলে, অন্য যে দলের হার কামনা করেন সেটা মনে থাকলেও চেপে যাওয়াটা শিখেন।
অনেক বড় বড় মানুষেরা কী ভীষণ নীচে নেমে আসেন এই ফুটবল দলকে ভালোবেসে তা প্রকাশ করতে গিয়ে, আমরা ছোট মানুষেরাও অনেক অনেক লজ্জা পেয়ে সেই কর্দমাক্ত মাঠের ধারে কাছেও যাই না তখন। কারো কারো চরিত্রে আর কিছুই হারানোর থাকেনা তারা নিজের প্রিয় দলকে ভালোবেসে দিওয়ানা থাকলে কিছু বলার ছিলো না। কিন্তু এমনভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে যে আপনি নিজে থেকে এই মানুষদের আবোল তাবোল প্রকাশ ইগ্নোর না করলে কিন্তু আপনারে কাউন্টার করে কোনো পোস্ট দেখবেন নিজের অজান্তেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আমি জানি আমার এই পোস্ট মূলত যাদের জন্যে তাঁরা কিছুতেই পড়বেন না, পড়লে তাদের পান্ডিত্য কমে যায় এই ভয়ে। তারপরও বলবো বন্ধু তালিকায় থাকা অনেক কাছের মানুষ প্রিয় মানুষকে ঘিরে অনেক অনেক অস্বস্তি হয় তাদের বিচ্ছিরি হিংসুটে স্বভাব দেখে যাদের কাউকে কাউকে বলতে ইচ্ছে করে। ইস যদি আয়নায় দেখতে তোমার চেহারাই কী ভীষণ বদলে গেছে মানুষের পেছনে লেগে থাকতে থাকতে, না তাই কী বলা যায়, তার চেয়ে গান ধরি ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে/এ হৃদয়ে, সে কিছু নয়/শত আঘাতেও, নিঃস্ব যে আজ/তার আবার , হারানোর ভয়’। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
